FAQ

Most Popular Questions

১টি। সেটি হলো কাবাঘর তাওয়াফ করা। আর উমরার শর্ত হলো ইহরাম বাঁধা। তবে কেউ কেউ বলেছেন উমরার রুকন তিনটি। যথা:

(১) ইহরাম বাঁধা।

(২) তাওয়াফ করা

(৩) সাঈ করা।

উল্লেখ্য যে, এ রুকনগুলোই উমরার ফরয।

৩টি, সেগুলো হল:

(১) ইহরামের কাপড় পরে উমরার নিয়ত করার কাজটি মীকাত পার হওয়ার আগেই করা।

(২) ‘সাফা ও মারওয়া’ এ দু’টি পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করা। কিছু আলেম একে রুকন অর্থাৎ ফরয বলেছেন।

(৩) চুল কাটা (মাথার চুল মুণ্ডানো বা ছোট করা)।

উমরা বৎসরের যেকোন মাস, যে কোন দিন ও যে কোন রাতে করা যায়। তবে ইমাম আবু হানীফার মতে আরাফাতের দিন, কুরবানীর দিন এবং আইয়ামে তাশরীকের তিন দিন উমরা করা মাকরূহ।

৩টি, সেগুলো হল:

(১) ইহরাম বাঁধা (অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে হজ্জের নিয়ত করা।)

(২) ৯ই যিলহজ্জে আরাফাতে অবস্থান করা।

(৩) তাওয়াফ : তাওয়াফে ইফাদা অর্থাৎ তাওয়াফে যিয়ারাহ করা।

উল্লে­খ্য যে, হজ্জের রুকনগুলোই মূলতঃ হজ্জের ফরয। এর কোন একটি রুকন ছুটে গেলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

৯ টি, সেগুলো হল:

(১) সাঈ করা। (অনেকের মতে এটা হজ্জের রুকন।)

(২) ইহরাম বাঁধার কাজটি মীকাত পার হওয়ার পূর্বেই সম্পন্ন করা।

(৩) আরাফাতে অবস্থান সূর্যাস্ত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত করা।

(৪) মুযদালিফায় রাত্রি যাপন।

(৫) মুযদালিফার পর কমপক্ষে দুই রাত্রি মিনায় যাপন করা।

(৬) কঙ্কর নিক্ষেপ করা।

(৭) হাদী (পশু) জবাই করা (তামাত্তু ও কেরান হাজীদের জন্য।)

(৮) চুল কাটা।

(৯) বিদায়ী তাওয়াফ।

যে কোন কারণেই কোন একটি ওয়াজিব ছুটে গেলে দম (অর্থাৎ পশু জবাই) দেয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

হজ্জের সুন্নত অনেক। এর মধ্যে উলে­খযোগ্য হল: (১) ইহরামের পূর্বে গোসল করা (২) পুরুষদের সাদা রঙের ইহরামের কাপড় পরিধান করা। (৩) তালবিয়াহ পাঠ করা (৪) ৮ই যিলহজ্জ দিবাগত রাত মিনায় অবস্থান করা (৫) ছোট ও মধ্যম জামারায় কংকর নিক্ষেপের পর দু‘আ করা (৬) কেরান ও ইফরাদ হাজীদের তাওয়াফে কুদূম করা।

তবে কোন কারণে সুন্নত ছুটে গেলে দম দিতে হয় না।

৩ প্রকার, যথা :

(১) তামাত্তু,  (২) কেরান,  (৩) ইফরাদ।

প্রথমত: ‘তামাত্তু’ হল হজ্জের সময় প্রথমে উমরা করে হালাল হয়ে ইহরামের কাপড় বদলিয়ে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা। এর কিছু দিন পর আবার মক্কা থেকেই ইহরাম বেধে হজ্জের আহকাম পালন করা।

দ্বিতীয়ত: ‘কিরান’ হল উমরা ও হজ্জের মাঝখানে হালাল না হওয়া এবং ইহরামের কাপড় না খোলা। একই ইহরামে আবার হজ্জ সম্পাদন করা।

তৃতীয়ত : ‘ইফরাদ’ হল উমরা করা ছাড়াই শুধুমাত্র হজ্জ করা।

প্রথমতঃ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ। তিনি বলেনঃ

অর্থ: মানুষের মধ্যে যার সামর্থ আছে আল্লাহর জন্য ঐ ঘরে হজ্জ করা তার উপর অবশ্য কর্তব্য।

দ্বিতীয়তঃ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস। তিনি বলেন:

(ক) ইসলামের ভিত্তি হয়েছে ৫টি স্তম্ভের উপর :

(১) আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বুদ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর রাসূল এ সাক্ষ্য দেয়া,

(২) সালাত আদায় করা,

(৩) যাকাত দেয়া,

(৪) রমজান মাসে সিয়াম পালন করা এবং

(৫) বায়তুল্লাহ শরীফে হজ্জ পালন করা। (বুখারী)

(খ) হে মানুষেরা! আল্লাহ্ তোমাদের উপর হজ্জ ফরয করেছেন। কাজেই তোমরা হজ্জ পালন কর। (মুসলিম)

: নিম্ন বর্ণিত শর্তগুলোর সবকটি পূরণ হলে হজ্জ ফরয হয়:

(১) মুসলমান হওয়া। অমুসলিম অবস্থায় কোন ইবাদাত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না।

(২) বালেগ হওয়া।

(৩) আকল-বুদ্ধি থাকা। অর্থাৎ অজ্ঞান ও পাগলের কোন ইবাদাত হয় না।

(৪) আর্থিক ও শারীরিক সক্ষমতা থাকা। আর্থিক সক্ষমতার অর্থ হলো হজ্জের খরচ বহন করার পর তার পরিবারের ভরণপোষণ চালিয়ে যাওয়ার মত সম্পদ ও সক্ষমতা থাকতে হবে। শারীরিক সুস্থতার সাথে তার যানবাহনের সুবিধা, পথের নিরাপত্তা থাকা এবং মহিলা হলে তার সাথে মাহরাম পুরুষ থাকা এসবও সক্ষমতার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর কোন একটির ব্যাঘাত ঘটলে হজ্জ ফরয হবে না।

সাথে সাথেই হজ্জ আদায় করতে হবে। দেরী করা উচিত নয়। কারণ, যে কোন সময় বিপদাপদ এমন কি মৃত্যু এসে যেতে পারে। অধিকাংশ ওলামাদের মত এটাই।

কাবা শরীফ গমনকারীদেরকে কাবা হতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্বে থেকে ইহরাম বাঁধতে হয়, যে স্থানগুলো নবীজির হাদীস দ্বারা নির্ধারিত আছে। ঐ জায়গাগুলোকে মীকাত বলা হয়। হারাম শরীফের চর্তুদিকেই মীকাত রয়েছে।

২ প্রকার: (ক) সময়ের মীকাত, (খ) স্থানের মীকাত।

হজ্জের জন্য সময়ের মীকাত হল শাওয়াল, যিলকদ এবং যিলহজ্জ মাস। অনেকের মতে শাওয়াল মাস থেকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিন পর্যন্ত। এ সময়গুলোকে হজ্জের মাস বলা হয়। অপরদিকে উমরার সময় হল বছরের যে কোন মাস, দিন ও রাত।

‘ইয়ালামলাম’ নামক স্থান থেকে। আকাশ পথে বিমান যখন উক্ত মীকাতে পৌছে তখন ক্যাপ্টেনের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়, তখনই ইহরাম বাধবে অর্থাৎ নিয়ত করবে। ঢাকা থেকেও ইহরামের কাপড় পরে যাওয়া যায়। তবে নিয়ত করবেন ‘মীকাতে’ পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। মনে রাখতে হবে যে, ইহরাম বাঁধা ছাড়া মীকাত অতিক্রম করা যাবে না। ইহরাম বাঁধার অর্থ হল ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা।

‘ইয়ালামলাম’ শব্দটি একটি উপত্যাকার নাম বলে জানা যায়। এ জায়গাটি মক্কা শরীফ থেকে ১২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এলাকাটি السعدية ‘সাদীয়া’ নামেও পরিচিত। যেসব দেশের লোকেরা এখান থেকে ইহরাম বাঁধে সেগুলো হল: (ক) ইয়ামেন, (খ) বাংলাদেশ, (গ) ভারতবর্ষ, (ঘ) চীন, (ঙ) ইন্দোনেশিয়া, (চ) মালয়েশিয়া, (ছ) দক্ষিণ এশিয়াসহ পূর্বের দেশসমূহ।

তাকে অবশ্যই আবার মীকাতে ফিরে গিয়ে ইহরাম বাঁধতে হবে, নতুবা একটি দম দিতে হবে অর্থাৎ একটি ছাগল, বকরী বা দুম্বা জবাই করে মক্কায় গরীবদের মধ্যে এর গোশত বিলি করে দিতে হবে। নিজে খেতে পারবে না।

(১ ) নখ ও চুল কেটে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া মুস্তাহাব।

(২) মুস্তাহাব হলো গোসল করে নেয়া।

(৩) সুগন্ধি মাখাও মুস্তাহাব। তবে মেয়েরা সুগন্ধি মাখবে না।

(৪) ইহরাম বাঁধা। অর্থাৎ ইহরামের কাপড় পরে উমরা বা হজ্জের নিয়ত করা। এটি ওয়াজিব।

(৫) মেয়েদের হায়েয অবস্থায়ও মীকাত পার হওয়ার আগে গোসল করে ইহরাম পরা সুন্নাত। অতঃপর হজ্জ বা   উমরার নিয়ত করা।

(৬) মুস্তাহাব হলো ফরয সালাতের পর ইহরাম বাঁধা।

(৭) দু’রাকআত সালাত (তাহিয়্যাতুল অজু) শেষ হলে নিয়ত করবেন।

(৮) অতঃপর তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবে। এটি নীচে দেয়া হল:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ ، لَبَّيْكَ لَا شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ ، إِنَّ الْحَمْدَ والنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكُ ، لَا شَرِيكَ لَكَ

অর্থ: হাজির হয়েছি হে আল্লাহ! তোমার ডাকে সাড়া দিয়ে আমি হাজির হয়েছি। আমি হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি তোমার কোন শরীক নাই, আমি হাজির। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা ও নেয়ামত তোমারই এবং রাজত্বও। তোমার কোন শরীক নাই।

নখ কাটা, গোফ খাট করা, বোগল ও নাভির নীচের চুল কামানো ও তা পরিষ্কার করা। তবে ইহরামের পূর্বে পুরুষ ও মহিলাদের মাথার চুল কাটার বিষয়ে কোন বিধান পাওয়া যায় না। উলে­খ্য যে, দাড়ি কোন অবস্থায়ই কাটা যাবে না। নখ-চুল কাটার পর গোসল করাও মুস্তাহাব।

গোঁফ ছোট করা, নখ কাটা, বগল পরিষ্কার করা এবং নাভির নীচের লোম পরিষ্কার করার কাজগুলোকে ৪০ রাতের বেশি সময় অতিক্রম না করার জন্য আমাদেরকে সময় নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে।  (মুসলিম ২৫৮)

চাদরের মত দু’টুকরা কাপড় একটি নীচে পরবে। দ্বিতীয়টি গায়ে দিবে। কাপড়গুলো সেলাইবিহীন হতে হবে। পরিচ্ছন্ন ও সাদা রং হওয়া মুস্তাহাব। ৩য় আর কোন প্রকার কাপড় গায়ে রাখা যাবে না। যেমন টুপি, গেঞ্জি, জাইঙ্গা বা তাবীজ কিছুই না। তবে শীত নিবারণের জন্য চাদর ও কম্বল ব্যবহার করতে পারবে।

মেয়েদের ইহরামের জন্য বিশেষ কোন পোষাক নেই। মেয়েরা সাধারণত: যে কাপড় পরে থাকে সেটাই তাদের ইহরাম। তারা নিজ ইচ্ছা মোতাবেক ঢিলেঢালা ও শালীন পোষাক পরবে। তবে যেন পুরুষের পোষাকের মত না হয়। এটা কাল, সবুজ বা অন্য যে কোন রঙের হতে পারে।

৩টি যথা:

(১) মীকাত থেকে ইহরাম বাঁধা।

(২) সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করা।

(৩) তালবিয়াহ পাঠ করা। অর্থাৎ নিয়ত করার পর তালবিয়াহ পাঠ করা ওয়াজিব।

না। নিকাব ও হাতমোজা এ অবস্থায় পরবে না। তবে ভিন্ন পুরুষ সামনে এলে মুখ আড়াল করে রাখবে। অর্থাৎ নিকাব ছাড়া ওড়না বা অন্য কোন কাপড় দ্বারা মুখমণ্ডল ঢাকার অনুমতি আছে।

তারা পরিচ্ছন্ন হবে, গোসল করবে, ইহরাম করবে। কিন্তু হায়েয-নেফাস অবস্থায় নামায পড়বে না এবং কাবাঘর তাওয়াফ করবে না। বাকী অন্যসব কাজ করবে। এরপর যখন পবিত্র হবে তখন অজু-গোসল করে তাওয়াফ ও সাঈ করবে। যদি ইহরামের পর হায়েয শুরু হয় তখনো কাবা তাওয়াফ করবে না যতক্ষণ পবিত্র না হয়।

পায়ের গোড়ালী ঢেকে রাখে এমন কোন জুতা পরা যাবে না। কাপড়ের মোজাও পরবে না। তবে সেন্ডেল পরতে পারে।

হ্যাঁ, তা জায়েয আছে। ইহরামের কাপড় মীকাত থেকে পরা সুন্নাত হলেও বিমান বা যানবাহনে উঠার আগেই গোসল করে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। তবে নিয়ত করা উচিত মীকাতে পৌঁছে বা এর পূর্বক্ষণে। কারণ, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম মীকাতে পৌছার আগে নিয়ত করতেন না। কাজেই মীকাতে পৌছার আগে নিয়তও করবে না এবং তালবিয়াহ পাঠও শুরু করবে না।

বিভিন্ন এয়ারলাইনসে ট্রানজিট পেসেন্জার হিসেবে যারা আবুধাবী, দুবাই, কুয়েত, দুহা, বাহরাইন, মাসকাট ও সানআ এয়ারপোর্টে নামবেন তারা সেখানেও পরিচ্ছন্নতা ও অজু-গোসলের কাজ সেরে ইহরামের কাপড় পরে নিতে পারেন। এরপর বিমানে যখন মীকাতে পৌঁছার ঘোষণা দেবে তখনই নিয়ত করে নেবেন এবং তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন। তবে ঘোষণা দেয়ার সঙ্গেই নিয়ত করে ফেলবেন। কারণ বিমান খুবই দ্রুত চলে। আপনার নিয়ত করা যেন মীকাতে পৌঁছার আগেই হয়ে যায়। তা না হলে দম দিতে হবে।

(ক) অযু অবস্থায় সাঈ করা ও সতর ঢাকা।

(খ) তাওয়াফ শেষে লম্বা সময় ব্যয় না করে সঙ্গে সঙ্গে সাঈ শুরু করা।

(গ) সাঈর এক চক্র শেষ হলে লম্বা সময় না থেমে পরবর্তী চক্র শুরু করা।

(ঘ) দু’টি সবুজ বাতির মধ্যবর্তী স্থানে পুরুষদের একটু দৌড়ানো।

(ঙ) প্রতি চক্রেই সাফা ও মারওয়া পাহাড় দু’টিতে আরোহণ করা।

(চ) সাফা ও মারওয়া পাহাড় এবং এর মধ্যবর্তী স্থানে যিক্র ও দোয়া করা।

(ছ) সক্ষম ব্যক্তির পায়ে হেঁটে সাঈ করা।

(১) তাওয়াফ শেষ করেই ‘সাফা’ পাহাড়ের দিকে রওয়ানা দেবেন। সাফাতে উঠার সময় নীচের দোয়াটি পড়বেন:

إن الصفا والمروة من شعائر الله (أَبْدَأُ بِمَا بَدَأَ اللهُ بِه)

অর্থ: “অবশ্যই ‘সাফা’ এবং ‘মারওয়া’ হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহের অন্যতম।” আল্লাহ্ যেভাবে শুরু করেছেন আমিও সেভাবে শুরু করছি।

এ দোয়াটি এখানে ছাড়া আর কোথাও পড়বেন না। সাঈর প্রথম চক্রের শুরুতেই শুধুমাত্র পড়বেন। প্রতি চক্রে বারবার এটা পুনরাবৃত্তি করবেন না।

 

(২) এরপর যতটুকু সম্ভব সাফা পাহাড়ে উঠুন। একেবারে চূড়ায় আরোহণ করা জরুরী নয়। তারপর কাবার দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে হাত তুলে নীচের দোয়াটি পড়ুন:

 

اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ اللهُ أَكْبَرُ – لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه” لاَ شَرِيكَ لَه” – لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ – لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه” لاَ شَرِيكَ لَـه، – أَنْجَزَ وَعْدَه، – وَنَصَرَ عَبْدَه، – وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَه

 

অর্থ: আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। আল্লাহ্ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক, তাঁর কোন শরীক নেই। আসমান যমীনের সার্বভৌম আধিপত্য একমাত্র তাঁরই। সকল প্রশংসা শুধু তাঁরই প্রাপ্য। তিনিই প্রাণ দেন এবং তিনিই আবার মৃত্যুবরণ করান। সবকিছুর উপরই তিনি অপ্রতিহত ক্ষমতার অধিকারী। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই। তিনি এক ও একক। তাঁর কোন শরীক নেই। যত ওয়াদা তাঁর আছে তা সবই তিনি পূরণ করেছেন। স্বীয় বান্দাকে তিনি সাহায্য করেছেন এবং একাই শত্রুদলকে পরাস্ত করেছেন। (আবূ দাউদ: ১৯০৫)

এ দোয়াটি তিনবার পড়ার পর দু’হাত উঠিয়ে যত পারেন দোয়া করুন, আরবীতে বা নিজের ভাষায় দুনিয়া ও আখেরাতের অসংখ্য কল্যাণ চাইতে থাকুন ।

(৩) অতঃপর ‘সাফা’ থেকে নেমে ‘মারওয়া’র দিকে হাঁটতে থাকুন। আর আল্লাহর যিকর্ ও দোয়া করতে থাকুন নিজের জন্য, পরিবার-পরিজনের জন্য এবং মুসলিম মিল্লাতের সবার জন্য। যখন সবুজ চিহ্নিত স্থানে পৌঁছবেন সেখান থেকে পরবর্তী সবুজ চিহ্নিত স্থান পর্যন্ত পুরুষেরা যথাসাধ্য দৌড়াতে চেষ্টা করবেন। তবে কাউকে কষ্ট দেবেন না। দ্বিতীয় সবুজ চিহ্নিত স্থানটি অতিক্রম করার পর আবার সাধারণভাবে হাঁটা শুরু করবেন। এভাবে হেঁটে মারওয়া পাহাড়ে পৌঁছে এর উঁচুতে আরোহণ করবেন। অতঃপর কিবলামুখী হয়ে ‘সাফা’ পাহাড়ে যা যা করেছিলেন সেগুলো এখানেও করবেন। অর্থাৎ الله أكبر থেকে শুরু করে وَهَزَمَ الأَحْزَابَ وَحْدَهُ পর্যন্ত পুরাটা পড়া তিনবার পড়া, অতঃপর দো‘আ করা। ‘সাফা’ থেকে ‘মারওয়া’য় আসার পর আপনার এক চক্র শেষ হল।

 

(৪) এবার আপনি ‘মারওয়া’ থেকে নেমে আবার ‘সাফা’র দিকে চলতে থাকুন। সবুজ চিহ্নিত দুই বাতির মধ্যবর্তী স্থানে সাধ্যমত আবার দৌড়াতে থাকুন। যখনি সবুজ চিহ্নিত স্থান অতিক্রম করে ফেলবেন তখনি আবার সাধারণ গতিতে হাঁটতে থাকবেন। ‘সাফা’ পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমবার যা যা পড়েছিলেন ও করেছিলেন এবারও তা এখানে পড়বেন ও করবেন। আবার মারওয়ায় গিয়েও তাই করবেন। এভাবে প্রত্যেক চক্রেই এ নিয়ম পালন করে যাবেন। সাফা থেকে মারওয়ায় গেলে হয় এক চক্র, আবার মারওয়া থেকে সাফায় ফিরে এলে হয় আরেক চক্র। এভাবে ৭ চক্র পূর্ণ করবেন।

 

(৫) ‘মারওয়া’য় গিয়ে যখন ৭ চক্র পূর্ণ হবে তখন চুল কেটে আপনি হালাল হয়ে যাবেন। পুরুষেরা মাথা মুণ্ডন করবে অথবা সমগ্র মাথা থেকে চুল কেটে ছোট করে নেবে। আর মহিলারা আঙ্গুলের উপরের গিরার সমপরিমাণ চুল কাটবে। চুল কাটা শেষে আপনি হালাল হয়ে গেলেন। ইহরামের কাপড় খুলে অন্য কাপড় পরবেন। ইহরাম অবস্থায় যেসব কাজ আপনার জন্য নিষিদ্ধ ছিল এগুলো এখন বৈধ হয়ে গেল।

প্রশ্ন: আমি পায়ে হেঁটে সাঈ শুরু করেছি। এরপর আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। সেক্ষেত্রে একটু বিশ্রাম নিয়ে বাকী চক্রগুলো ট্রলিতে করে পূর্ণ করতে পারব কি?

উত্তর: হ্যাঁ। পারবেন।

(১) পুরা মাথা মুণ্ডন করবেন অথবা মাথার সব অংশ থেকে চুল ছোট করে কেটে ফেলবেন।

(২) চুল ছোট করে কাটার চেয়ে মাথা মুণ্ডন করার মধ্যে সাওয়াব বেশী। কেননা রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা মুণ্ডনকারীদের জন্য তিনবার রহমত ও মাগফিরাতের দোয়া করেছেন। অপরদিকে যারা চুল খাট করে কেটেছেন তাদের জন্য মাত্র একবার দোয়া করেছেন।

(৩) মাথার কিছু অংশের চুল ছোট করে কাটলে যথেষ্ট হবে না, বরং সমগ্র মাথা থেকে চুল ছোট করে কাটা অত্যাবশ্যক।

 মেয়েদের মাথা মুণ্ডনের বিধান নেই। তারা শুধু চুল ছোট করবে।

মহিলাদের জন্য মাথা মুণ্ডনের কোন বিধান নেই। তারা তাদের মাথার চার ভাগের একাংশ চুলের অগ্রভাগ থেকে আঙ্গুলের উপরের গিরার সমপরিমাণ (অর্থাৎ এক ইঞ্চির একটু কম) চুল কেটে দেবে। মেয়েরা এর চেয়ে বেশী পরিমাণ চুল কাটবে না।

ব্লেড বা ক্ষুর দিয়ে সম্পূর্ণ মাথা কামিয়ে দিবে। চুলবিহীন মাথাও ব্লেড দিয়ে এভাবে মুণ্ডন করা হানাফী, মালেকী ও হাম্বলী মাযহাব মতে ওয়াজিব।

গোসল করা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া ও গায়ে সুগন্ধি মাখা। তবে কুরবানীকারীরা ১লা যিলহজ্জ থেকে কুরবানীর পূর্ব পর্যন্ত চুল-নখ কাটবেন না।

নিজ নিজ ঘর বা বাসস্থান থেকেই ইহরাম বাঁধবেন। মক্কায় অবস্থানকারীরাও নিজ নিজ ঘর থেকে ইহরাম বাঁধবেন। ইফরাদ ও কেরান হাজীগণ যারা আগে থেকেই ইহরাম পরা অবস্থায় আছেন, তাঁরা ইহরাম অবস্থায়ই থাকবেন। ইহরামের পোষাক পরার পর হজ্জের নিয়ত করে ফেলবেন।

হজ্জের জন্য মনে মনে নিয়ত করবেন এবং মুখেও বলবেন لَبَّيْكَ حَجًّا অথবা বলবেন اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ حَجًّا শেষ হলে তালবিয়াহ পড়তে থাকবেন। তালবিয়াহ হল:

لَبَّيْكَ اللَّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ لَبَّيْكَ –إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيكَ لَكَ

অতঃপর দলে দলে মিনার উদ্দেশ্যে চলতে থাকবেন গাড়ীতে হোক বা পায়ে হেঁটে হোক।

সূর্যোদয়ের পর থেকে যুহরের নামাযের আগেই রওয়ানা দেয়া মুস্তাহাব। অর্থাৎ যুহরের নামাযের আগেই মিনায় চলে যাওয়া উত্তম।

চার রাকআত বিশিষ্ট ফরয নামাযগুলো দু’রাকআত করে পড়তে হবে। এটাকে কসর করা বলা হয়। সে নামাযগুলো হলো যুহর, আসর ও এশা। হজ্জের সময় মিনা, আরাফা ও মুয্দালিফায় রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার ভিতরের ও বাইরের সকল লোককে নিয়ে এ সালাতগুলো কসর করে পড়েছিলেন, এটা সুন্নাত। এ ক্ষেত্রে তিনি মুকীম বা মুসাফিরের মধ্যে কোন পার্থক্য করেননি। অর্থাৎ মক্কার লোকদেরকেও চার রাকআত করে পড়তে বলেননি। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া ও ফাতাওয়া ইবনে বায) তবে মনে রাখতে হবে যে, ফজর ও মাগরিবের ফরয নামায অর্থাৎ দুই এবং তিন রাকআত বিশিষ্ট নামায কখনো কসর হয় না। মিনাতে প্রত্যেক সালাত ওয়াক্তমত আদায় করবেন, জমা করবেন না। অর্থাৎ যুহর-আসর একত্রে এবং মাগরিব-এশা একত্রে পড়বেন না। এমনকি মুসাফির হলেও না।

মিনায় আজকের রাত্রি যাপন মুস্তাহাব বা সুন্নাত। যেহেতু আগামীকাল আরাফার দিন, সেহেতু আজকের রাতকে বলা হয় “আরাফার রাত”। এ রাতে সূর্য উদয় হওয়ার আগ পর্যন্ত মিনাতেই অবস্থান করা সুন্নাত।

(১) এ তারিখে দিনের বেলায়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রথম আসমানে অবতীর্ণ হন।

(২) আল্লাহ কাছে ঐ দিনের চেয়ে উত্তম আর কোন দিন নেই।

(৩) বান্দাদের জন্য আল্লাহ তাঁর দয়ার ভাণ্ডার খুলে দেন।

(৪) সেদিন আল্লাহ বান্দাদের অতি নিকটবর্তী হন।

(৫) আরাফাতে অবস্থানকারী ও মাশআরুল হারাম- বাসীকে আল্লাহ সেদিন ক্ষমা করে দেন।

(৬) উমর রাদিআল্লাহু আনহুর প্রশ্নের জবাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আরাফায় আগমনকারীদের জন্য এ ক্ষমা প্রদর্শন কিয়ামত পর্যন্ত চালু থাকবে।

(৭) যমীনবাসীদের নিয়ে আল্লাহ ফেরেশতাদের সাথে গৌরব করে বলেন, “আমার বান্দাদের দিকে তাকিয়ে দেখ তারা ধূলিমলিন অবস্থায় এলোকেশে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছে আমার রহমতের আশায়, অথচ আমার আযাব তারা দেখেনি। কাজেই আরাফার দিনে এত অধিক সংখ্যক লোককে জাহান্নাম থেকে আমি মুক্তি দিয়ে দিচ্ছি যা অন্যদিন তারা পায়নি।

(৮) শয়তান ঐদিন সবচেয়ে বেশী লাঞ্ছিত, হীন ও নিকৃষ্ট বনে যায় এবং তাকে ক্রোধান্বিত দেখা যায়। বান্দাদের দোয়া কবূল ও যিক্রের মাধ্যমে শয়তানকে বেদনাবিধুর করে দেয়া হয়।

(৯) আল্লাহ সেদিন বলেন, এরা কি চায়? অর্থাৎ হাজীরা যা চায় তাই তিনি দিয়ে দেন।

(১০) সেদিন ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং রহমত বর্ষিত হয়।

আপনার মনের যত সব হাজত আছে সবই তা প্রাণ খুলে আল্লাহর কাছে চাইতে পারেন আপনার ভাষায়। এছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -এর শেখানো কিছু দোয়া আছে। দোয়াগুলো বার বার করতে থাকবেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শ্রেষ্ঠ দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া।”

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা দোয়া সাধারণতঃ তিনবার করে করতেন। কিন্তু আরাফার মাঠে পুনরাবৃত্তি করতেন আরো বেশী পরিমাণে।

আদবগুলো নিম্নরুপ:

(১) গোসল করে নেয়া,

(২) পরিপূর্ণ পবিত্র থাকা,

(৩) কিবলামুখী হয়ে দোয়া করা ও অন্যান্য তাসবীহ পড়া,

(৪) দোয়া, তাসবীহ ও তাওবা-ইস্তিগফারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া,

(৫) নিজের ও অন্যদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে উভয় জাহানের কল্যাণ ও মুক্তি চেয়ে দোয়া করা,

(৬) দু’হাত উঠিয়ে দোয়া করা,

(৭) মনকে বিনম্র ও খুশু-খুযু রেখে মুনাজাত করা,

(৮) দোয়াতে কণ্ঠস্বর নীচু রাখা, উচ্চঃস্বরে দোয়া না করা।

হাঁ, পারবে। কারণ স্ত্রীসহবাস বা স্বপদোষের কারণে যে নাপাক হয় তা ইচ্ছা করলেই নিমিষের মধ্যে গোসল করে পবিত্র হওয়া যায়। কিন্তু হায়েজ-নিফাস থেকে পবিত্র হওয়া মানুষের ইচ্ছাধীন নয়। বিষয়টি আল্লাহ্র হাতে এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। এজন্য হায়েজ-নিফাসওয়ালী মহিলাদের জন্য কুরআন-হাদীসের এসব দোয়া পড়া জায়েয আছে।

Far far away, behind the word mountains, far from the countries Vokalia and Consonantia, there live the blind texts. Separated they live in Bookmarksgrove right at the coast

হাজীদের যেসব ত্রুটি বিচ্যুতি সাধারণতঃ পরিলক্ষিত হয় সেগুলো নিম্নরুপ:

(১) কিছু লোক আরাফার সীমানার বাইরে বসে থাকে। অথচ আরাফার সীমানা চিহ্নিত খুঁটি চতুর্দিকেই দেয়া আছে। এ কাজে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

(২) কিছু হাজী পাহাড়ে গিয়ে ভীড় জমায়, এর পাথর ছুঁয়ে গায়ে মুছে। এগুলো শির্ক বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত।

(৩) কিছু কিছু হাজী অনর্থক কথাবার্তা, গল্পগুজব ও হাসাহাসি করে দোয়া কালাম পড়া থেকে বিরত থেকে মূল্যবান সময় নষ্ট করে হজ্জকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

(৪) আবার কেউ কেউ দোয়ার সময় কেবলামুখী না হয়ে জাবালে রহমত পাহাড় মুখী হয়ে দোয়া করে। অথচ সুন্নাত হলো কাবার দিকে মুখ করে দোয়া করা।

(৫) আরেকটি বড় ভুল হলো এই যে, কিছু হাজী সূর্য ডুবার আগেই আরাফার ময়দান ছেড়ে চলে যায়। এটা জায়েয নয়।

(৬) আবার কিছু হাজী ফজরের আগেই মিনা থেকে আরাফায় রওয়ানা দেয়। সুন্নত হলো সূর্যোদয়ের পর রওয়ানা দেয়া।

(৭) মসজিদে নামিরায় জামাআত না পেলে যুহর-আসর একত্রে না পড়ে পৃথক পৃথক ওয়াক্তে আদায় করে। এটাও ঠিক নয়।

(৮) আরাফায় যুহর-আসর একত্রে পড়া ও দুই দুই রাক‘আত করে কসর করা জায়েয মনে না করা। এটা ভুল ধারণা।

সূর্য অস্ত যাওয়ার পর আরাফাতে মাগরিবের নামায না পড়ে মুযদালিফায় রওয়ানা দেবেন। পৌঁছতে দেরী হলেও মাগরিব-এশা মুযদালিফায়ই পড়তে হবে। এ দেরীকে কাযা মনে করবেন না। সেদিনের জন্য এটাই নিয়ম। সেখানে যাওয়ার সময় মোয়ালে­মের গাড়ীতে বা কয়েকজন মিলে একজনকে গ্রুপ লীডার বানিয়ে তার নেতৃত্বে দল বেঁধে মুযদালিফার উদ্দেশ্যে পথ চলতে পারেন। পথে যাতে হারিয়ে না যান, কেউ যাতে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ে, সেজন্য গ্রুপ লীডার একটি বাংলাদেশী পতাকা কাঁধে নিয়ে চলতে পারেন। সেখানেও ভীড় হয়। ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া থেকে সতর্ক থাকবেন। সাথে নারী-শিশু থাকলে আরো বেশী সাবধান থাকবেন। ভীড়ের কারণে শোয়ার জন্য খালী ভাল জায়গা অনেক সময় পাওয়া যায় না। টয়লেটেও প্রচুর ভীড় হয়। দেখে-শুনে শোয়ার জায়গা বেছে নেবেন।

“মাশআরুল হারাম” থেকে মিনায় যাবার সময় কংকর সংগ্রহ করা যায়।

সুন্নাত হলো প্রথম দিনের ৭টি কংকর মাশআরুল হারাম থেকে রওয়ানা দেয়ার পর মুযদালিফা থেকেই কুড়াবেন। এখান থেকে এর বেশী নয়। আর বাকী ৩ দিনের প্রত্যেক দিনের ২১টি করে কংকর মিনা থেকেই কুড়ানো যায়। এটাই সর্বোত্তম পদ্ধতি। তবে হারামের মধ্যবর্তী যে কোন স্থান থেকেই কংকর কুড়ানো জায়েয আছে।

চলার সময় বেশী বেশী লাব্বাইকা অর্থাৎ তালবিয়াহ ও আল্লাহু আকবার পড়তে থাকবেন। ওয়াদি মুহাস্সির (وادي محسر) নামক স্থানে পৌঁছলে সামান্য দ্রুত গতিতে হাঁটা মুস্তাহাব, যদি অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়া ছাড়া এটি করা যায়, তবেই তা করবেন। “ওয়াদী মুহাস্সির” নামক জায়গাটি মুযদালিফা ও মিনার মধ্যবর্তী একটি উপত্যকার নাম। উলে­খ্য যে, বড় জামারায় পৌঁছা মাত্র তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবেন।

আরাফার ময়দান থেকে মুযদালিফায় ফিরে আসার মুহুর্তটি বেশ কঠিন। সূর্যাস্তের পর পরই ত্রিশ/চলি­শ লক্ষ লোক এক সময়ে একযোগে আরাফা থেকে মুযদালিফায় রওয়ানা দেয়। বাসের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত থাকলেও রাস্তাতো সীমিত। পাহাড়ী উপত্যকা বেয়ে তিন/চার মিলিয়ন মানুষের লক্ষাধিক বাস গাড়ী একসাথে চললে ট্রাফিকজ্যাম কতটা কঠিন হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। মাঝে মধ্যে গাড়ীগুলো এমনভাবে থেমে থাকে মনে হয় যেন আর চলবে না। তাছাড়া বেশির ভাগ ড্রাইভার বিদেশী ও নতুন। রাস্তাঘাট ভাল চেনে না, কথা বলে আরবীতে, আমরা তা বুঝিনা। “সব রাস্তা বন্ধ, গাড়ী আর চলবে না।” -এ কথা বলে কখনো কখনো আবার গাড়ী থেকে হাজী সাহেবদেরকে নামিয়ে দেয়। আরাফা থেকে মুযদালিফার দূরত্ব মাত্র ৬/৭ কিলোমিটার হলেও কিছু গাড়ী ফজরের আগে মুযদালিফায় পৌঁছতেই পারে না। তাছাড়া মুযদালিফা এসে গেছে ধারণা করে কিছু লোক দেখাদেখি মাঝপথে মাগরিব এশা পড়ে ও রাত্রি যাপন করে। অবশেষে ফজর বাদ মুযদালিফার সীমানায় এসে সাইনবোর্ড দেখে তাদের ভুল বুঝতে পেরে আক্ষেপ করে।

এভাবে হজ্জের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় অনেক হাজীর। অতি বৃদ্ধ, দুর্বল ও রোগী না হলে এ জন্য সহজ হল আরাফা থেকে পায়ে হেঁটে মুযদালিফায় আসা। সেজন্য মাদুর ও ছোট এক/দুটা হালকা বিছানা পত্র ছাড়া ভারী কোন লাগেজ আরাফায় না নেয়াই ভাল। শুধু হাঁটার জন্য আলাদা পথ রয়েছে, যা সমতল ও পীচ ঢালা। এ পথে কোন যানবাহন ঢুকেনা। তাই হাঁটতে বেশ আরাম। রাস্তায় পর্যাপ্ত বাতি থাকে। মেঘবৃষ্টি সাধারণতঃ হয় না। আবহাওয়া থাকে ভাল। সকলেই একযোগে একমুখী চলা। সবার মুখে একই তালবিয়া “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক…”

প্রয়োজনে রাস্তার পাশে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটতে পারেন। দলবদ্ধ হয়ে পথ চললে ভাল হয়। ভীড়ের কারণে এ সময় কিছু লোক হারিয়েও যায়। সে জন্য খুব সতর্ক থাকবেন। সাথে শিশু ও নারী থাকলে আরো সাবধান থাকবেন।” নতুবা নারী-শিশুদেরকে বাসেই আনবেন। মুযদালিফার সীমানায় পৌঁছলে সাইনবোর্ড দেখতে পাবেন। যেখানে লেখা আছে,

Muzdalifa Starts Here

(অর্থাৎ মুযদালিফা এখান থেকে শুরু)

আর এ এলাকা শেষ হলে দেখতে পাবেন সীমানা চিহ্নিত

আরেকটি সাইনবোর্ড যেখানে লেখা পাবেন,

Muzdalifa Ends Here

(অর্থাৎ মুযদালিফা এখানে শেষ)

দিন দিন হাজীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এখানে শোয়ার যায়গা পর্যাপ্ত পাওয়া যায় না। সমতল বা ঢালু যাই পান একটা সুবিধাজনক স্থান বাছাই করে কয়েকজনে মিলে জামায়াতের সাথে মাগরিব-এশার সালাত আদায় করে নেবেন। সারা রাত প্রতিটি টয়লেটের সামনে ১০/১২ জনের দীর্ঘ লাইন লেগেই থাকে। এজন্য পানি কম খাওয়া ভাল।

শোয়ার জন্য এটা কোন আরাম দায়ক স্থান নয়। এটা ইবাদতের স্থান। গুনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার স্থান। বালু কণা আর পাথরের টুকরা যাই থাকুক এরই উপর একটি মাদুর বিছিয়ে খোলা আকাশের নীচে শুয়ে পড়বেন। ভুলে যাবেন নিজের অর্থবিত্ত ও পদমর্যাদার গৌরব। ধনী গরীব মিলে মিশে সকলেই একসাথে একাকার হয়ে যাবেন। আপনার নিবেদন শুধু একটাই “হে আল্লাহ আমাকে তুমি মাফ করে দাও।”

ভোরে মুযদালিফা থেকে পায়ে হেঁটে মিনায় পৌঁছতে হবে। গাড়ীতে যাওয়ার সুযোগ হয় না বললেই চলে। কারণ মানুষের ঢলের কারণে গাড়ী চলা দুরূহ হয়ে পড়ে। সেদিনের দীর্ঘ হাঁটা, ক্লান্তি ও সঙ্গী সাথী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাব্য সমস্যা, ইত্যকার যাবতীয় কষ্ট বরণ করে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকুন।

কত নম্বর খুঁটির নিকটে মিনায় আপনার তাঁবু তা আগে থেকেই জেনে রাখুন। কারণ এখান থেকে হারিয়ে গেলে জনরাশির মহাস্রোতে আপনাকে খুঁজে বের করা খুব কঠিন। মিনায় তাঁবুতে পৌঁছে নাস্তা খেয়ে একটু বিশ্রাম করে কয়েকজনকে সাথে নিয়ে পরে কংকর নিক্ষেপ করতে যেতে পারেন। এর পূর্বে কংকর নিক্ষেপের মাসআলাগুলো আবার একটু পড়ে নিবেন।

Reference book:

প্রশ্নোত্তরে হজ্জ ও উমরা, কামিয়াব প্রকাশন
– অধ্যাপক মুহাম্মাদ নুরুল ইসলাম মক্কী

নামাযসহ অন্যান্য সকল ইবাদাতের নিয়ত করতে হয় মনে ইচ্ছা পোষণ করে। তবে ইহরামের সময় মুখে শুধু হজ্জ বা উমরা শব্দ উচ্চারণ করতে হয়।

তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন, আর তা

(ক) বেশী বেশী পড়বেন।

(খ) উচ্চস্বরে পড়বেন।

(গ) তবে মেয়েরা পড়বে নীচু স্বরে, যাতে সে কেবল নিজে শুনতে পায়।

(ঘ) বেশী বেশী যিকর্ আযকার করতে থাকবে।

(ঙ) কিবলামুখী হয়ে তালবিয়াহ পড়া উত্তম, তাছাড়া উচু থেকে নীচে নামা ও নিচু থেকে উঁচু স্থানে উঠার সময়ও তালবিয়াহ পাঠ করা সুন্নাত।

ইহরামের কাপড় পরার পর যখনই নিয়ত করা শেষ করবেন তখন থেকে তালবিয়াহ পাঠ শুরু করবেন, আর শেষ করবেন হারাম শরীফে পৌঁছে তাওয়াফ শুরুর পূর্বক্ষণে। আর হজ্জের বেলায় ১০ই যিলহজ্জে বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপের পূর্ব পর্যন্ত তালবিয়াহ পাঠ করতে থাকবেন।

এটি ঠিক নয়। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লাম ও সাহাবায়ে কিরাম এমনটি করেননি। উলামায়ে কিরাম এটিকে বিদআত বলেছেন। বিশুদ্ধ হলো একাকী নিজে নিজে তালবিয়াহ পাঠ করা।

হাদীসে আছে

(১) তালবিয়াহ পাঠকারীর সাথে তার ডান ও বামের গাছপালা এবং পাথরগুলোও তালবিয়াহ পড়তে থাকে।

(২) তালবিয়াহ পাঠকারীকে আল্লাহর পক্ষ থেকে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হয়।

ঐ দু’রাকাত নামায তাহিয়াতুল অজুর নিয়তে পড়বেন। আর ফরয নামায আদায়ের পর হলে স্বতন্ত্র আর কোন নামায পড়তে হবে না।

নিষিদ্ধ কাজগুলো নিম্নরূপ:

(১) চুল উঠানো বা কাটা, হাত ও পায়ের নখ কাটা। তবে শরীর চুলকানোর সময় ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি কিছু চুল পড়ে যায় তাতে অসুবিধা নেই।

(২) ইহরাম বাঁধার পর সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না।

(৩) স্ত্রী সহবাস, যৌনক্রিয়া বা উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর দিকে তাকানো, তাকে স্পর্শ করা, চুম্বন করা, মর্দন ও আলিঙ্গন করা বা এ জাতীয় কথা বলা নিষেধ।

(৪) বিবাহ করা বা দেয়া, এমনকি প্রস্তাব দেওয়াও নিষেধ। চাই নিজের বা অন্যের হোক, উভয়ই নিষেধ।

(৫) স্থলজ প্রাণী শিকার করা বা হত্যা করা নিষিদ্ধ। এতে সহযোগিতা করবেন না। কিন্তু পানির মাছ ধরতে পারবেন। হারামের সীমানার ভিতর প্রাণী শিকার করা ইহরাম বিহীন লোকদের জন্যও নিষেধ।

(৬) সেলাইযুক্ত কাপড় পরা, এটা করা যাবে না। তবে ঘড়ি, আংটি, চশমা, কানের শ্রবণ যন্ত্র, বেল্ট, মানিব্যাগ ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন।

(৭) মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে।

(৮) মাথা ঢেকে রাখা নিষেধ। মুখও ঢাকবে না। ইহরামের কাপড়, পাগড়ী, টুপি তোয়ালে, গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়েও মাথা ঢেকে রাখা যাবে না। তবে ছাতা, তাবু, গাড়ীর বা ঘরের ছাদের ছায়ার নীচে বসতে পারবেন। ভুলে বা অজ্ঞাতসারে যদি মাথা ঢেকে ফেলে তবে স্মরণ হওয়া মাত্র তা সরিয়ে ফেলতে হবে। মেয়েরা মাথা ঢেকে রাখবে।

(৯) মহিলারা হাত মোজা পরবে না। নিকাব দিয়ে মুখ ঢাকবে না। পর্দার প্রয়োজন হলে উড়না দিয়ে ঢাকবে।

(১০) ঝগড়া-ঝাটি করবে না।

(১১) ইহরাম অবস্থায় থাকুক বা না থাকুক মক্কা শরীফের হারামের সীমানার ভিতরে কেউ এমনিতেই গজিয়ে উঠা কোন গাছ বা সবুজ বৃক্ষলতা কাটতে পারবে না।

এ জন্য কোন দম বা ফিদইয়া দিতে হবে না। স্মরণ হওয়া মাত্র বা অবগত হওয়ার সাথে সাথে এ কাজ থেকে বিরত হয়ে যাবে এবং এজন্য ইস্তেগফার করবে। তবে যৌনক্রিয়ায় লিপ্ত হলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

ফিদইয়া দিতে হবে। আর এর পরিমাণ হলোঃ

(ক) একটি ছাগল জবাই করে গোশত বিলিয়ে দেয়া, অথবা

(খ)  ছয়জন মিসকিনকে এক বেলা খানা খাওয়াতে হবে, (প্রত্যেককে এক কেজি বিশ গ্রাম পরিমাণ) অথবা

(গ) তিনদিন রোযা রাখবে।

উলামায়ে কিরামের কিয়াস অনুসারে মাথা ছাড়া অন্য অংশ থেকে চুল উঠালে বা কাটলে অথবা নখ কাটলে উপরে বর্ণিত ফিদইয়া কার্যকরী হবে।

নিম্ন বর্ণিত কাজগুলো বৈধঃ

(১) গোসল করতে পারবে। পরনের ইহরামের কাপড় বদলিয়ে আরেক জোড়া ইহরাম পরতে পারবে, ময়লা হলে কাপড় ধৌত করা যাবে।

(২) ইহরাম অবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, ফোঁড়া গালানো, দাঁত উঠানো ও অপারেশন করা যাবে।

(৩) মোরগ, ছাগল, গরু, উট ইত্যাদি জবাই করতে পারবে এবং পানিতে মাছ ধরতে পারবে।

(৪) প্রয়োজন হলে আস্তে আস্তে শরীর চুলকানো যাবে।

(৫) বেল্ট, আংটি, ঘড়ি, চশমা পরতে পারবে।

(৬) যেকোন ছায়ার নীচে বসতে পারবে।

(৭) সুগন্ধযুক্ত না হলে সুরমা ব্যবহার করা যাবে।

(৮) মেয়েরা সেলাইযুক্ত কাপড় পরতে পারবে এবং অলংকারও ব্যবহার করতে পারবে।

(৯) ইহরাম অবস্থায় পুরুষেরাও ছোটখাট সেলাই কাজ করতে পারবে।

(১০) কোমরের বেল্টে টাকাপয়সা ও কাগজপত্র রাখতে পারবে।

(১১) ডাকাত বা ছিনতাইকারী দ্বারা আক্রান্ত হলে আত্মরক্ষার্থে আক্রমণকারীকে হত্যাও করা যাবে। আর নিজে নিহত হলে শহীদ হবে। এ উদ্দেশ্যে অস্ত্রও বহন করা যাবে।

(১২) ইহরাম অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে ইহরামের কোন ক্ষতি হয় না।

না, সুগন্ধওয়ালা সাবান দিয়ে গোসল করা জায়েয নয়, এমনকি হাতও ধুইবে না।

তখন ইস্তিনজা করে ঐ অংশটি ধুয়ে পরিষ্কার করে নেবে। আর সালাতের ওয়াক্ত হলে অজু করে সালাত আদায় করবে।

এমনটি ঘটলে ফরয গোসল করে নেবে এবং কাপড় ধুয়ে ফেলবে। এতে হজ্জ বা উমরার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি ফিদইয়াও দিতে হবে না। কারণ স্বপ্নদোষ মানুষের ইচ্ছাধীন কোন ঘটনা নয়

এতে হজ্জ বা উমরার কোন ক্ষতি হবে না। এমনকি নখের অংশবিশেষ পড়ে গেলেও সমস্যা নেই।

মসজিদুল হারামে ঢুকে প্রথমে ৭ বার কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। এরপর দু’রাকআত নামায শেষে ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে সাঈ করবেন ৭ বার। সবশেষে চুল কেটে হালাল হয়ে যাবেন, অর্থাৎ ইহরামের কাপড় বদলিয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করবেন।

কাজগুলো নিম্নরুপ:

(১) মক্কায় পৌঁছে সুবিধাজনক কোন স্থানে একটু বিশ্রাম করা যাতে ক্লান্তি দূর হয় এবং শক্তি অর্জিত হয়। তাছাড়া তাওয়াফের পূর্বে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র হওয়া জরুরী। (বুখারী)

(২) সম্ভব হলে গোসল করে নেয়া মুস্তাহাব। রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটি করতেন। (বুখারী) সুযোগ না পেলে না-করলেও চলবে। তবে নাপাকী থেকে অবশ্যই পবিত্র হতে হবে।

(৩) সহজসাধ্য হলে উঁচুভুমি এলাকা দিয়ে মক্কায় প্রবেশ করাও মুস্তাহাব। (বুখারী) “বাবুস্  সালাম” গেট দিয়ে ঢুকা উত্তম। তা সম্ভব না হলে যে কোন দরজা দিয়ে ঢুকতে পারেন।

(৪) হারাম শরীফে প্রবেশকালে উত্তম হলো ডান পা আগে দিয়ে ঢুকা এবং নীচের দোয়াটি পড়াঃ

أَعُوذُ بِاللهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ – اَللَّهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ

এবং মসজিদে হারাম থেকে বের হওয়ার সময় পড়াঃ

بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ اَللَّهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ

এ দোয়াগুলো দুনিয়ার অন্যসব মসজিদেও পড়া সুন্নত।

(৫) “মসজিদে হারাম”এর তাহিয়াহ হল তাওয়াফ করা। আর তাওয়াফের নিয়ত না থাকলে দু’রাকআত সালাত আদায় না করে মসজিদে কখনো বসবেন না। তবে, জামাআত দাঁড়িয়ে গেলে সরাসরি জামাআতে শরীক হয়ে যাবেন।

(৬) অসুস্থ ও মাযুর ব্যক্তিদের জন্য খাটিয়ায় চড়ে তাওয়াফ বা সাঈ করা জায়েয আছে। (বুখারী)

(৭) প্রথম তাওয়াফকে ‘তাওয়াফুল কুদুম’ (طواف القدوم) বা ‘তাওয়াফুল উমরা’ বলে।

৩টি, যথা:

(১) তাওয়াফের নিয়ত করা,

(২) তাওয়াফের ৭ চক্র পূর্ণ করা,

(৩) মসজিদে হারামের ভিতরে থেকে কাবার চারপাশে তাওয়াফ করা।

এখানে সুন্নাত হল যমযম পান করতে চলে যাওয়া, কিছু পানি মাথায় ঢেলে দেয়া, অতঃপর সম্ভব হলে পুনরায় হাজারে আসওয়াদ স্পর্শ করা। এরপর সাফা-মারওয়ায় সাঈ করতে চলে যাওয়া। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবেই করেছেন।

না, এটা কখনো চুম্বন করবেন না। তবে “রুকনে ইয়ামানী” স্পর্শ করা মুস্তাহাব।

তাওয়াফ। কারণ তাওয়াফের সুযোগ এখানে ছাড়া দুনিয়ায় আর কোথাও নেই।

সাঈ করে ফেলবে। কারণ সাঈতে পবিত্রতা অর্জন শর্ত নয়, বরং মুস্তাহাব।

সাঈ অর্থ দৌড়ানো। কাবার অতি নিকটেই দু’টো ছোট্ট পাহাড় আছে যার একটি ‘সাফা’ ও অপরটির নাম ‘মারওয়া’। এ দু’ পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে মা হাজেরা শিশুপুত্র ইসমাঈল -এর পানির জন্য ছোটাছুটি করেছিলেন। ঠিক এ জায়গাতেই হজ্জ ও উমরা পালনকারীদেরকে দৌড়াতে হয়। শাব্দিক অর্থে দৌড়ানো হলেও পারিভাষিক অর্থে স্বাভাবিক গতিতে চলা। শুধুমাত্র দুই সবুজ পিলার দ্বারা চিহ্নিত মধ্যবর্তী স্থানে সামান্য একটু দৌড়ের গতিতে চলতে হয়। তবে মেয়েরা দৌড়াবে না।

সাঈর কাজটি ওয়াজিব। তবে কেউ কেউ এটা রুকন অর্থাৎ ফরয বলেছেন।

(১) প্রথমে তাওয়াফ এবং পরে সাঈ করা।

(২) ‘সাফা’ থেকে শুরু করা এবং ‘মারওয়া’য় গিয়ে শেষ করা।

(৩) ‘সাফা’ ও ‘মারওয়া’র মধ্যবর্তী পূর্ণ দূরত্ব অতিক্রম করা। একটু কম হলে চলবে না।

(৪) সাত চক্র পূর্ণ করা।

(৫) সাঈ করার স্থানেই সাঈ করতে হবে। এর পাশ দিয়ে করলে চলবে না।

সঙ্গে সঙ্গে জামা‘আতে শরীক হয়ে যাবেন। সালাত শেষে বাকী চক্র পূর্ণ করবেন।

তখন সাঈ বন্ধ না করে বাকী চক্র পূর্ণ করবেন। সাঈ শুদ্ধ হবে। এমনকি তাওয়াফ শেষ করার পরও যদি কোন মহিলার হায়েয শুরু হয়ে যায় তাহলে এ অবস্থায়ও সাঈ করে ফেলবে। এটা জায়েয আছে। কারণ সাঈর জন্য পবিত্রতা মুস্তাহাব, কিন্তু শর্ত নয়।

হ্যাঁ, আছে। সে দু‘আটি হল:

 

رَبِّ اغْفِرْ وَارْحَمْ إِنَّكَ أَنْتَ الأَعَزُّ الأَكْرَمُ

চুলকাটা হজ্জ ও উমরা উভয় ইবাদতের ক্ষেত্রে ওয়াজিব।

মনে হওয়া মাত্র সাধারণ পোষাক খুলে ফেলবে এবং পুনরায় ইহরামের কাপড় পরিধান করে মাথা মুণ্ডন বা চুল কেটে ফেলবে। এরপর সাধারণ পোষাক পরবে।

যে কোন জায়গায় কাটতে পারেন। তবে উত্তম হলো উমরা পালনকারী ‘মারওয়া’র আশেপাশে এবং হাজী মিনায় চুল কাটবে।

পুরুষেরা উমরা শেষে চুল খাট করবে এবং হজ্জ শেষে মাথা মুণ্ডন করবে, এটাই উত্তম।

মীকাত থেকে ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ, সাঈ ও চুলকাটা শেষ হলে আপনার উমরাহ পালন সম্পন্ন হয়ে গেল। এখন ইহরামের কাপড় বদলিয়ে স্বাভাবিক পোষাক পরিধান করুন। অতঃপর হজ্জের ইচ্ছা থাকলে আপনি সে জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।

ইহরাম বেঁধে মিনায় রওয়ানা হওয়া এবং সেখানেই রাত্রি যাপন করা।

(১) ৮ই যিলহজ্জ তারিখে ইহরাম বেঁধে তাওয়াফ ও সাঈ করে মিনায় রওয়ানা দেয় এবং দশ তারিখে তাওয়াফ করে আর সাঈ করে না। এটা ভুল। শুদ্ধ হলো ইহরাম বাঁধার পর তাওয়াফ ছাড়া মিনায় রওয়ানা দেবেন।

(২) কেউ কেউ সূর্যোদয়ের আগে মিনায় রওয়ানা দেয়। এটাও ভুল।

ইহরাম জায়েয হবে। তবে সুন্নাত আমলের সাওয়াব পাবে না।

এটা হজ্জের রুকন। এটা বাতিল হয়ে গেলে হজ্জ বাতিল হয়ে যাবে।

৯ই যিলহজ্জ সূর্য উদয় হওয়ার পর আরাফাতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন। এর আগ পর্যন্ত মিনাতেই অবস্থান করা সুন্নত। রওয়ানা দেয়ার সময় তালবিয়াহ ও কালিমা পড়বেন ও তাকবীর বলতে থাকবেন।

(১) আরাফায় পৌঁছে মসজিদে ‘নামিরা’র কাছে অবস্থান করা মুস্তাহাব অর্থাৎ উত্তম। সেখানে জায়গা না পেলে আরাফার সীমানার ভিতরে যে কোন স্থানে অবস্থান করতে পারেন। এতে কোন অসুবিধা নেই (মুসলিম)। তবে পাশেই ‘উরানা’ নামের একটি উপত্যকা আছে। সেটি আরাফার চৌহদ্দির বাইরে। কাজেই সেখানে যাবেন না। ঐখানে অবস্থান করবেন না।

 

(২) যুহরের সময় হলে ইমাম সাহেব খুৎবা দেবেন। খুৎবার পর যুহরের ওয়াক্তেই যুহর ও আসরের সালাত একত্রে জমা করে পড়বেন। দু’ নামাযেরই আযান দেবেন একবার, কিন্তু ইকামাত দেবেন দু’বার। কসর করে পড়বেন। অর্থাৎ যুহর দু’রাকআত এবং আসরও দু’রাকআত পড়বেন। যুহরের ওয়াক্তেই আসর পড়ে ফেলবেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কাবাসী ও বহিরাগত সব হাজীকে নিয়ে একত্রে এভাবে নামায পড়িয়েছিলেন। এটা সফরের কসর নয়, বরং হজ্জের কসর। কোন নফল-সুন্নাত নামায আরাফায় পড়বেন না। কারণ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পড়েননি।

(৩) মসজিদে নামিরায় যেতে না পারলে নিজ নিজ তাবুতেই উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে জামা‘আতের সাথে যুহর-আসর একত্রে যুহরের আউয়াল ওয়াক্তে দুই দুই রাক‘আত করে কসর ও জমা করে পড়বেন।

(৪) আরাফার ময়দানের সীমানা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে অবশ্যই আরাফার পরিসীমার ভিতরে অবস্থান করতে হবে। আরাফার সীমানা চিহ্নিত করে চতুষ্পার্শে অনেক পিলার দেয়া আছে। এর বাইরে অবস্থান করলে হজ্জ হবে না।

(৫) সুন্নাত হলো বেশী বেশী দোয়া করা, দোয়ার সময় হাত উঠানো, অত্যন্ত বিনম্র হওয়া, যিক্র করা, তাসবীহ পড়া, ‘আলহামদুলিল্লাহ্’ ও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ পড়া, তাওবাহ করা, কান্নাকাটি করে গোনাহ মাফ চাওয়া, মাতা-পিতা, স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী, নানা-নানী, আপনজন ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বেশী বেশী দোয়া করা।

 

তাছাড়া নীচের দোয়াটি আরো বেশী বেশী পড়া উত্তম:

لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَه” لاَ شَرِيكَ لَه” لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلٰى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

এছাড়া নীচের তাসবীহটি বেশী বেশী পড়বেন।

سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ وَسُبْحَانَ اللهِ الْعَظِيْمِ

এতদসঙ্গে অন্যান্য মাসনূন দোয়া সূর্যাস্ত পর্যন্ত করতে থাকবেন। সাওয়াব কমে যাবে এমন কোন কাজ করা থেকে সাবধান থাকতে হবে।

(৬) যখন সূর্য ডুবে যাবে এবং সূর্য অস্ত গিয়েছে এরূপ নিশ্চিত হবেন তখন প্রশান্ত মনে ধীরে সুস্থে মুযদালিফায় রওয়ানা দেবেন। এ সময় বেশী বেশী তালবিয়াহ পড়তে থাকবেন। সাবধান, কোন অবস্থাতেই সূর্যাস্তের আগে আরাফার ময়দান ত্যাগ করা যাবে না।

দুপুরে সূর্য পশ্চিমে ঢলার পর থেকে আরাফার প্রকৃত সময় শুরু হয়। তবে ইমাম হাম্বলের মতে সেদিনের সকালের ফজর উদয় হওয়া থেকেই এ সময় শুরু হয়। আর এর শেষ সময় হল আরাফার দিবাগত রাত্রির ফজর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।

দিনে অবস্থানকারীর সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করা।

এক্ষেত্রে আরাফাতে কিছুক্ষণ অবস্থান করলে তার হজ্জ হয়ে যাবে। মুযদালিফায় গিয়ে রাতের বাকী অংশ যাপন করবে।

না, সেখানে আরোহণ করে ইবাদত ও দোয়া-তাসবীহ পাঠে সাওয়াব বেশী হওয়ার কথা কুরআন-হাদীসে নেই।

আরাফার দিন রোযা রাখা অত্যন্ত সাওয়াবের বিষয় হলেও আরাফায় অবস্থানকারী হাজীগণ এ রোযা রাখবে না। বিশেষ করে মাঠে অবস্থানকারী হাজীদের জন্য ঐ দিন রোযা না রাখা মুস্তাহাব, অর্থাৎ রোযা না রাখাই বিধান। কারণ খানাপিনা না খেলে এ কঠিন ইবাদতের জন্য শরীরে শক্তি পাবে না। হজ্জের এ পরিশ্রান্ত ইবাদত যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য শক্তির প্রয়োজন। তাই খাবার গ্রহণ করা জরুরী।

না, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফায় শুধুমাত্র ফরয পড়ে দোয়ায় মনোনিবেশ করেছিলেন।

Far far away, behind the word mountains, far from the countries Vokalia and Consonantia, there live the blind texts. Separated they live in Bookmarksgrove right at the coast

(১) বিলম্ব হলেও মুযদালিফায় পৌঁছে মাগরিব-এশা পড়তে হবে, এর আগে নয়। তবে এ দুই নামাযকে বিলম্ব করতে করতে অর্ধ রাত্রির পরে নিয়ে যাওয়া জায়েয হবে না। তবে ওযর থাকলে জায়েয।

(২) তারতীব ঠিক রেখে সালাত আদায় করবেন। অর্থাৎ প্রথম তিন রাক‘আত মাগরিবের ফরজ এবং এর সাথে সাথে দুই রাক‘আত এশার ফরজ আদায় করবেন, বিত্র পড়বেন, ফজরের সুন্নাতও বাদ দেবেন না।

(৩) এ দুই ওয়াক্ত সালাতের জন্য মাত্র একবার আযান দেবেন। কিন্তু ইকামত দুই বারই দিতে হবে।

(৪) কোন নফল-সুন্নাত নামায নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুযদালিফায় পড়েননি। আপনিও পড়বেন না।

(৫) সালাত আদায় শেষ হওয়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়বেন যাতে পরবর্তী দিনের কার্যাবলী সক্রিয়ভাবে সম্পন্ন করা যায়।

(৬) ঐ দিনের ফজর অন্ধকার থাকতেই আউয়াল ওয়াক্তে পড়ে নেবেন। দুই রাকাত ফরজের সাথে দুই রাকাত সুন্নতও পড়বেন। এরপর “মাশআরুল হারাম”-এর নিকটবর্তী কিবলামুখী দাঁড়িয়ে হাত উঠিয়ে দোয়া-মুনাজাত করতে থাকবেন। এখানে আসতে না পারলে অসুবিধা নেই। মুযদালিফার যে কোন স্থানে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে পারবেন।

“মাশআরুল হারাম” একটি পাহাড়ের নাম। এটি মুযদালিফায় অবস্থিত। এখানে একটি মসজিদও আছে। এখানে হাজীদের যা করণীয় তা হল: (১) মাশআরুল হারামের নিকট কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো, (২) তাকবীর বলা, (৩) তাসবীহ-তাহলীল পড়া অর্থাৎ ‘সুবহানআল্লাহ্’, ‘আলহামদুলিল্লাহ্’এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’’ পড়া। (৪) যিকর্ করা এবং (৫) প্রাণ খুলে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দোয়া করা, (৬) খুশু-খুযু ও বিনম্র হয়ে মাবুদের কাছে আপনার যা চাওয়ার আছে তা চেয়ে নেবেন। বিশেষ করে আপনার মাতা-পিতা, স্ত্রী, পুত্র-সন্তানাদি ও আপনজন-আত্মীয়স্ব জনের জন্যও দোয়া করবেন। (৭) দোয়ার সময় দু’ হাত উঠিয়ে মুনাজাত করা মুস্তাহাব।

এভাবে ফজরের নামাযের পর থেকে আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দোয়া করতে থাকা মুস্তাহাব। ভীড়ের কারণে “মাশআরুল হারাম”-এর কাছে যেতে না পারলে মুযদালিফার যে কোন স্থানে দাঁড়িয়ে এভাবে দোয়া করবেন।

ফজরের সালাত আদায় না করা পর্যন্ত মুযদালিফায় থাকতে হবে। ফজরের সালাত শেষে তাসবীহ-তাহলীল ও দোয়ার পালা। আকাশ ফর্সা হয়ে গেলে সূর্য উঠার আগেই মিনায় রওয়ানা দেবেন। প্রচণ্ড ভীড়ের কারণে ট্রাফিক জামের দরুন বাসের অপেক্ষা না করে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দেয়াই ভাল।

হ্যাঁ, দুর্বল নারী ও শিশু এবং অক্ষম ব্যক্তিদের জন্য অর্ধ রাত্রির পর মুযদালিফা থেকে মিনায় চলে যাওয়া জায়েয হবে। দুর্বল ও অসুস্থদের সাহায্যার্থে তাদের সাথে সুস্থ অভিভাবকরাও যেতে পারবে। এরূপ ওযর ছাড়া মুযদালিফায় ফজর আদায় না করে কারো মিনায় চলে যাওয়া ঠিক হবে না। চলে গেলে দম দিতে হবে।

Need More Help?

Don't Hesitate to contact us for more help.

Open chat
Scan the code
Hello 👋
Can we help you?