আমাদের কাছে দুনিয়া মানেই ভোগ বিলাসিতা। ক্যারিয়ার, চাকরি, বাড়ি, গাড়ি, অট্টালিকা,ব্যাংক-ব্যালেন্স সহ দুনিয়ার সব চোখ ধাঁধানো ব্যাপার স্যাপারই যেন আমাদের কাছে দুনিয়া।
সামান্য একটু গরমে এসি না হলে আমরা তারাবীহ পড়তে পারি না। ডাইনিং টেবিলে বসে ভাত না খেলে যেন আমাদের খাওয়াই হয় না।
ফোমের আরামদায়ক বিছানায় গা এলিয়ে শু’তে না পারলে যেন আমাদের চোখই বুজে আসতে চায় না। পেটভর্তি খেয়ে এমন অবস্থা করি, ইবাদাত করার ইচ্ছে এবং শক্তি- দুটোই হারিয়ে বসি।
অথচ, রাসূল (ﷺ ), যিনি আমাদের আদর্শ, তিনি কেমন ছিলেন বলতে পারেন?
আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ
❝একবার এক আনসার মহিলা আমার কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেলো, রাসূল (ﷺ) এঁর তোষক হলো দ্বি-ভাজ করে রাখা আলখাল্লা সদৃশ একটি উলের কম্বল। এ দৃশ্য দেখে আনসার মহিলা তাঁর ঘরে গিয়ে উলে-ভর্তি একটি তোষক আমার কাছে পাঠিয়ে দিলো।
রাসূল (ﷺ) আমার কক্ষে এসে জিজ্ঞেস করলেনঃ ❝এটি কী?❞
আমি বললামঃ ❝অমুক আনসার মহিলা আমার কক্ষে প্রবেশ করেছিলো। সে আপনার বিছানা দেখে এটি পাঠিয়েছে।❞
রাসূল (ﷺ) বললেনঃ
❝এটি ফেরত পাঠিয়ে দাও।❞
তবে, আমি সেটা ফেরত পাঠাই নি। তোষকটি আমাকে মুগ্ধ করেছিলো। আমি চাচ্ছিলাম সেটি আমার ঘরেই থাকুক।
শেষ পর্যন্ত এটি ফেরত পাঠাতে রাসূল (ﷺ) আমাকে তিনবার নির্দেশ দিয়ে বললেনঃ
❝আয়িশা! এটি ফেরত দিয়ে দাও। আল্লাহর শপথ! আমি যদি চাইতাম, তাহলে আল্লাহ তা’লা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড়কে আমার সাথে চলমান করে দিতেন❞।
পরিশেষে, আমি তা ফেরত পাঠিয়ে দিই……❞
(কিতাবুয যুহ্বদ, ইমাম আহমদ ইবন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ)
এই হচ্ছে আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসূল (ﷺ)।
বিলাসিতা যাকে স্পর্শ করতে পারেনি কোনদিন। একটি আরামের তোষকও যিনি নিতে প্রস্তুত ছিলেন না।
আমরা যারা দুনিয়ামুখী আছি, তাদের কী কিছুই শেখার নেই? কতটা শিখছি আমরা? কতটুকুই বা জানছি? প্রশ্ন করি নিজেকে।
যাদের হাতে পুরো অর্ধ পৃথিবীর শাসনভার ছিলো, কত নির্মোহ, নির্লোভ, নিঃস্বার্থ জীবনযাপনই না তারা করেছেন। যাদের কাছে পার্থিব এই জীবনের চেয়ে আখিরাতের জীবন ছিলো বেশি মূল্যবান। আর আমরা? কী করছি দুনিয়ার লোভে পড়ে?
আল্লাহ বলেন —
❝শপথ সময়ের! নিশ্চই মানুষ ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত❞।
(সূরা আল আসরঃ ১-২